কঙ্কালের কার্যক্রম এবং 'রডস ও লিভার তন্ত্র
(The action of Skeleton and "Rods & Lever" System) : কঙ্কালিক পেশি আলাদাভাবে কাজ করতে পারে না। একটি পেশি যখন কঙ্কালের সঙ্গে যুক্ত থাকে তখন স স্থান ও বাকরি নির্ধারণ করে দেয় এর বল, গতি ও সঞ্চালনের মাত্রা কেমন হবে। এসব বৈশিষ্ট্য স্বাধীন এবং এদের নির্ভর করে পেশি ও কঙ্কালতন্ত্রের সাধারণ গঠনের উপর। নির্দিষ্ট একটি পেশির সংকোচনে যে বল, গতি ও 1 দিক প্রকাশ পায় তা বদলে দেওয়া যাবে যদি ঐ পেশিকে একটি লিভারের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া যায়। পিতার (lover) এমন একটি অনমনীয় (red) যা সন্ধির মাধ্যমে সৃষ্ট একটি স্থায়ী পয়েন্ট বরাবর ঘুরতে সক্ষম। শিশুদের দোলায়মান বাউলায়মান দাঁড়ান বা হাঁটা লিডার ক্রিয়ার পরিচিত উদাহরণ। লিভারের মাধ্যমে (১) আরোপিত (applied) দিক (2) আরোপিক বলের ফলে সৃষ্ট চলনের দূরত্ব ও গতি এবং (৩) আরোপিত বলের কার্যকর শক্তি (effective strength) পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ পেশিটানের ক্রিয়া কঙ্কালতন্ত্রের বিভিন্ন অংশে যেভাবে প্রকাশিত হয় তবে কঙ্কালতন্ত্রে বড় ও লিভার তন্ত্রের প্রভাব এবং আমাদের হাত-পা'গুলোকে মেশিন ছাড়া আর কিছু ভাবার উপায় নেই। লিভারের প্রতি যে কোন বলপ্রয়োগকে বলে প্রচেষ্টা (effort)। যে বলপ্রয়োগে লিভারের চলন বাধাগ্রস্থ হয় (যেমন - দন্ডের উপর ওজনের কারণে নিম্নমূখি বল প্রয়োগ) তাকে বলে ভার (load) বা প্রতিবন্ধক (resistance)) পেশিশু সংকোচন হচ্ছে প্রচেষ্টা, আর এতে সংশ্লিষ্ট দেহের অংশটি হচ্ছে ভার বা বাধা। শরীরের হাড়গুলো লিভার (যান্ত্রিক কৌশল) হিসেবে কাজ করে, ফলে গতি বা শক্তির এক যান্ত্রিক সুবিধার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ লিভারের ব্যবহারে একটি ক্ষুদ্র ফল (force) বিরাট বল-এ পরিবর্তিত হতে পারে। পায়ের পেশির সামান্য সংকোচনের ফলে পায়ের শীর্ষে বৃহত্তর সঞ্চালন একটি ফুটবলকে সজোরে দূরে পাঠাতে সাহায্য করে। এটাই হচ্ছে যান্ত্রিক সুবিধা (mechanical advantage) ।
লিভারের গঠন (Structure of Lever):
একটি লিভার ৪টি অংশ দিয়ে গঠিতঃ
১. লিভার-বাহ (Lever arms) হাড়গুলো লিভার-বাহু হিসেবে কাজ করে;
২. পিট (Pivot)- যে অস্থিসন্ধিকে কেন্দ্র করে লিভারের কাজ কর্ম পরিচালিত হয়;
৩. প্রচেষ্টা (Effort )- তার সরানো বা নড়ানোর জন্য পেশি যে বল (force) সরবরাহ করে; এবং
৪. ভার (Load)- দেহের কোনো অংশের ওজন যা সরাতে হবে বা উঠাতে হবে কিংবা দেহের ভেতরে বা বাইরে নিতে হবে।
লিভারের প্রকারভেদ(Types of Lever):
পিট, প্রচেষ্টা ও ভার-এর অবস্থানের ভিত্তিতে লিভার নিচেবর্ণিত ৩ রকম ।
ক. প্রথম-শ্রেণির লিভার (First class lever): এ ধরনের লিভারে পিটটি ডার ও প্রচেষ্টার মাঝখানে অবস্থান করে। কাঁচি এ ধরনের লিভার, কিন্তু মানবদেহে প্রথম শ্রেণি লিভার দুর্লভ। একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, মাথা ও প্রথম কশেরুকার মধ্যবর্তী সন্ধিটি । এক্ষেত্রে মাথার খুলি হচ্ছে লিভার-বাহু; খুলি ও প্রথম কশেরুকা (অ্যাটলাস)-র মধ্যকার সন্ধিটি পিট; মাথার পেছনে অবস্থিত পেশি থেকে আসা পেশল ক্রিয়া হচ্ছে প্রচেষ্টা; এবং ভার হচ্ছে মাথার ওজন যা প্রচেষ্টার কর্মকান্ডে উঁচু হয়ে থাকে (ওজনের বিরুদ্ধে)। পেশি (প্রচেষ্টা) শিথিল হলে মাথা ঝুঁকে পড়ে। এ লিভারের মাধ্যমে অল্প বল প্রয়োগে বেশি ফল পাওয়া যায়।
খ. দ্বিতীয় শ্রেণির লিভার (Second-class lever): এ ধরনের লিভারে ভারের অবস্থান থাকে পিভট ও প্রচেষ্টার মাঝখানে। ঠেলাগাড়ি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ঠেলাগাড়ির মেঝেয় যে মাল রাখা হয় সেটি ভার। এ অংশটি থাকে পিডটরপী। হুইল আর প্রচেষ্টারপী ঠেলাচালকের হাতের মধ্যবর্তী স্থানে। পায়ের আঙ্গুলের ডগায় দাড়ালে দ্বিতীয় শ্রেণির লিভার সৃষ্টি। হয়। তখন আঙ্গুলের সন্ধিগুলো হয় পিট, দু'পা লিডার বাহু, কাফ পেশি ও গোড়ালির টেন্ডন প্রচেষ্টা (যখন কাফ সংকুচিত হয়) এবং দেহের ওজার (যা পেশি সংকোচনের ফলে উপরে উত্থিত হয়। এ ধরনের লিভারের পেশি সাহায্যে সামান্য প্রচেষ্টায় বেশি ওজনকে উপরে তুলে ধরা সহজ হয়।
গ. তৃতীয়-শ্রেণির লিভার (Third-class lever) : এ ধরনের লিভারের প্রচেষ্টা থাকে পিভট ও ভার-এর মাঝখানে । উদাহরণ হিসেবে নখ কাটার যন্ত্রের (nail flipper) কথা উল্লেখ করা যায়। মানবদেহে তৃতীয়-শ্রেণির লিভারের সংখ্যা | মাদক। একটি ভাঁজ করা বাহুকে তৃতীয়-শ্রেণির লিভার বলা যায়। এ ক্ষেত্রে কনুইয়ে রয়েছে পিভট (কনুই-সন্ধি), সম্মুখ বহু হচ্ছে লিভার-বাহু, বাইসেপস পেশি প্রচেষ্টার যোগান দেয়, আর সম্মুখ বাহু কিংবা কোনো ওজনদার বস্তুসহ সম্মুখ বচ্ছ হচ্ছে ভার। তৃতীয় শ্রেণির লিভারে প্রচেষ্টার অবস্থান ভার ও পিভটের মাঝে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে প্রচেষ্টা আরপিভট খুব কাছাকাছি অবস্থান করে। প্রচেষ্টার চেয়ে ভার বেশি হওয়ায় এ ক্ষেত্রে কোনো যান্ত্রিক সুবিধা পাওয়া যায় না। তবে বাইসেপস পেশির সামান্য সংকোচনে সম্মুখ বাহুতে বৃহত্তর সঞ্চালনের সৃষ্টি হয় বলে যান্ত্রিক অসুবিধাটুকু পূরণ হয়ে যায়। দ্রুতগতির সঞ্চালন (movement) সুবিধা পাওয়া যায় এ ধরনের লিভার থেকে।
Read more